ফ্রান্সে গির্জায় সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের নেতারা। দেশটির নিস শহরের নটর ডেম গির্জায় বৃহস্পতিবার ছুরি হামলায় নিহত হন তিন জন। তাদের মধ্যে দুজন শিরশ্ছেদের শিকার হন।
পুলিশের অভিযানের সময় গুলিবিদ্ধ হামলাকারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিসে গির্জায় হামলার দুই ঘণ্টার মধ্যে আরেক শহর অ্যাভিননে পুলিশের গুলিতে নিহত হন এক বন্দুকধারী।
এছাড়া, সৌদি আরবের জেদ্দায় ফরাসি কনস্যুলেটে ছুরি হামলায় আহত হয়েছেন একজন নিরাপত্তা কর্মী।
সবকটি ঘটনাকেই ইসলামি চরমপন্থী গোষ্ঠীর কাজ বলে দাবি করেছে ফ্রান্স।
নিসে নটর ডেম গির্জায় হামলার ঘটনা ঘটে সকাল ৯টার দিকে। প্রার্থনার জন্য আসা সত্তোরোর্ধ এক নারীকে ছুরি চালিয়ে গির্জার সামনে শিরশ্ছেদ করেন হামলাকারী যুবক।
এর পরে শিরশ্ছেদের শিকার হন ৪৫ বছরের এক ব্যক্তি। তিনি ওই গির্জার ওয়ার্ডেন ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
হামলাকারী আফ্রিকান বংশোদ্ভুত এক নারীকেও ছুরিকাঘাত করে। ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে একটি বারে আশ্রয় নেয়ার পর সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
পরে পুলিশ অভিযান চালায় গির্জায়। গুলিতে আহত অবস্থায় ধরা পড়েন হামলাকারী। প্রাথমিকভাবে তার নাম ‘ব্রাহিম’ বলে জানা গেছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হামলাকারী যুবক একাই হামলার সঙ্গে যুক্ত বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।
ফ্রান্সের সন্ত্রাসবিরোধী প্রসিকিউটর বিভাগকে হামলার তদন্তের ভার দেয়া হয়েছে।
শহরের মেয়র ক্রিস্টিয়ান এসট্রসি এক টুইটে জানান, নটর ডেম গির্জায় ঢোকার সময় ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দেয় হামলাকারী।
তিনি বলেন, ‘অনেক হয়েছে। আমাদের সীমানা থেকে ইসলামো-ফ্যাসিবাদ উপড়ে ফেলতে এবার শান্তির আইন থেকে ফ্রান্সের সরে আসার সময় হয়েছে।’
নিস থেকে ১২০ মাইল দূরের শহর অ্যাভিননে পুলিশের গুলিতে এক বন্দুকধারীর নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে সকাল সোয়া ১১টার দিকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বন্দুক হাতে এক ব্যক্তি 'আল্লাহু আকবর' ধ্বনি দিয়ে পথচারীদের হুমকি দিতে শুরু করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশ না মানায় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
নিহত ব্যক্তির পরিচয় তাৎক্ষণিক জানা যায়নি।
সৌদি আরবের জেদ্দায় ফরাসি কনস্যুলেটে ছুরি হামলায় আহত নিরাপত্তা কর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার আঘাত গুরুতর নয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
হামলাকারীকে গ্রেফতার করেছে সৌদি পুলিশ। এ ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়ে সৌদি আরবে ফরাসি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে রিয়াদের ফরাসি দূতাবাস।
বিশ্বনেতাদের নিন্দা
ফ্রান্সে হামলার ‘তীব্র নিন্দা’ জানিয়ে নিহতদের স্বজনের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এমন কোনো যুক্তি নেই যা কাউকে হত্যা বা সহিংসতার বৈধতা দিতে পারে। এটি পরিষ্কার যে, যারা একটি পবিত্র জায়গায় এ রকম নৃশংস হামলা চালিয়েছে তাদের কোনো ধর্ম, মানবতা ও নৈতিক মূল্যবোধ নেই।’
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট ডেভিড সাসোলি এক টুইটে বলেন, ‘নিসের ভয়াবহ হামলার খবরে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। ইউরোপের সবাই এর বেদনা অনুভব করছে।’
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এক টুইটে বলেন, ‘আক্রমণের শিকার হওয়া মানুষের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সংহতি। আমরা সবাই সন্ত্রাস ও ঘৃণার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আছি।’
টুইটে সংহতি জানিয়েছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে। ইতালিয়ান ও ফরাসি উভয় ভাষাতেই তিনি লিখেছেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ।’
খ্রিষ্টান ধর্মের সর্বোচ্চ নেতা পোপ ফ্রান্সিস হামলায় হতাহতদের জন্য প্রার্থনা করছেন বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে ভ্যাটিকান সিটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সন্ত্রাস ও সহিংসতা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আজকের হামলা প্রেম ও শান্তির একটি জায়গায় মৃত্যুর বীজ বপন করেছে।’
হামলার নিন্দা জানিয়েছেন ফ্রান্সের মুসলিমরাও। দ্য ফ্রেঞ্চ কাউন্সিল অফ দ্য মুসলিম ফেইথ এক টুইট বার্তায় লিখেছে, ‘আমরা নিসের নটর ডেম গির্জায় ঘটা সন্ত্রাসী হামলার কঠোর নিন্দা জানাই।’
প্যারিসের উপকণ্ঠের একটি স্কুলে মহানবী হজরত মোহাম্মদের (সা.) কার্টুন দেখানোর জেরে গত ১৬ অক্টোবর স্কুলশিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে শিরশ্ছেদ করেন চেচেন বংশোদ্ভূত এক যুবক।
এ ঘটনার পর প্যাটির ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনকে সমর্থন করে বিবৃতি দেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ।
মাখোঁর এই অবস্থানের প্রতিবাদ চলছে মুসলিম বিশ্বে। বিভিন্ন দেশে ফরাসি পণ্য বর্জনেরও ডাক দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা হাজারো শিক্ষার্থীর জন্য আশার আলো জ্বালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের ছাত্র ভিসার আবেদন গ্রহণ শুরু করেছে। এ উপলক্ষে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি মুখপাত্র মিগনন হিউস্টন এক কঠোর বার্তা দিয়েছেন—এই ভিসার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন। খবর এনডিটিভির।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের ভিসানীতিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই জাতীয় নিরাপত্তাকে। কোনো শিক্ষার্থী যদি ভিসার অপব্যবহার করে, ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বা পড়াশোনার নামে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে আসে, তাহলে তা আমরা বরদাশত করব না।
হিউস্টন মনে করিয়ে দেন, ভিসা শুধু যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের টিকিট নয়, বরং এটি আচরণ, উদ্দেশ্য ও সৎ প্রয়াসেরও প্রতীক। তিনি বলেন, আমরা চাই শিক্ষার্থীরা যেন পড়াশোনা করতে আসে, শিখে ফিরে যায়, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতার অংশ না হয়। আমরা অন্য শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং একটি গঠনমূলক শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে চাই।
এই বক্তব্য স্পষ্টতই প্রমাণ করে, যুক্তরাষ্ট্র এখন শুধু মেধা খুঁজছে না, খুঁজছে নৈতিক দায়বদ্ধতা। মিগনন হিউস্টনের বক্তব্যের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পর্ক। তার কথায়, ভারত শুধু বাণিজ্যিক অংশীদার নয়, এটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় স্তম্ভ। কোয়াড ও সামগ্রিক আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় ভারতের ভূমিকা অপরিহার্য।
তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র এমন বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় যা ন্যায্য ও সমতাভিত্তিক।
মঙ্গলবার (০১ জুলাই) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমার বিশ্বাস, আমরা ভারতের সঙ্গে শিগগির একটি নতুন ধরনের চুক্তি করতে যাচ্ছি। এখন ভারত মার্কিন কোম্পানিকে যথাযথ প্রবেশাধিকার দেয় না। আমি মনে করি তারা তা দেবে, এবং তাতে কম ট্যারিফে ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তি সম্ভব হবে।
এ বক্তব্যে স্পষ্ট, চুক্তি শুধু অর্থনৈতিক নয়—এটি একটি কূটনৈতিক ও কৌশলগত অগ্রগতি হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
এনডিটিভি বলছে, একদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য দরজা খুলে দিচ্ছে, অন্যদিকে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে চলেছে। ভিসা, বাণিজ্য, এবং কৌশলগত অংশীদারত্ব—সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের গতি দ্রুততর এবং বহুমাত্রিক।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের নামে সুগন্ধি পণ্য বাজারে এনে আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা প্রশ্ন তুলেছেন, প্রেসিডেন্টের পদমর্যাদা ব্যবহার করে ট্রাম্প ও তার পরিবার ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক লাভবান হচ্ছেন কি না?
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, এই তো ‘ট্রাম্প’ সুগন্ধি। এগুলোর নাম ‘ভিক্টরি ৪৫-৪৭’, কারণ এগুলো জয়, শক্তি ও সাফল্যের প্রতীক।
নতুন এই সুগন্ধিগুলো পুরুষদের জন্য কালো ও নারীদের জন্য লাল বাক্সে সোনালি অক্ষরে ‘ট্রাম্প’ব্র্যান্ডে বাজারজাত করা হয়েছে। বোতলের আকৃতি ট্রাম্পের ক্ষুদ্র ভাস্কর্যের মতো, যা ট্রাম্পের ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
এদিকে, ট্রাম্পের এই ঘোষণা কেন্দ্র করে সামাজিকমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ট্রাম্প প্রকাশ্যে ব্যক্তিগত ব্যবসার প্রচার করছেন।
ভার্জিনিয়ার ডেমোক্র্যাট সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার এক্সে প্রকাশিত এক ভিডিওতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন প্রকাশ্য দুর্নীতি আর কখনো দেখা যায়নি। এটা একেবারেই প্রতারণামূলক ব্যবসা ও পদ ব্যবহার করে দুর্নীতি।
ভেরমন্টের ডেমোক্র্যাট সিনেটর পিটার ওয়েলচ আরও কড়া ভাষায় সমালোচনা করে বলেন, একদিকে, রিপাবলিকানরা বাজেট বিলের মাধ্যমে দরিদ্র আমেরিকানদের স্বাস্থ্যসুবিধা কমানোর চেষ্টা করছে। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজের সুগন্ধির বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ডেমোক্র্যাটরা যখন ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা রক্ষায় লড়ছে, ট্রাম্প তখন নিজের ব্যস্ত নিজের সুগন্ধি বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত।
সুগন্ধি পণ্য ছাড়াও, ট্রাম্প পরিবারের সাম্প্রতিক ব্যবসার তালিকায় রয়েছে টেলিকম সেবা ও স্মার্টফোন। গত জুনে ট্রাম্পের পারিবারিক ব্যবসা ‘ট্রাম্প’ ব্র্যান্ডের লাইসেন্স ব্যবহার করে ‘ইউএস মোবাইল’ নামে একটি সেবা চালুর পাশাপাশি ৪৯৯ ডলারের একটি স্মার্টফোন বাজারে আনা হয়। সোনালি রঙের ওই মোবাইলফোনটি ট্রাম্পের রুচির প্রতিফলন বলেই দেখা হচ্ছে।
ট্রাম্প বহুবার বলেছেন, তিনি তার ব্যবসা সন্তানদের পরিচালনায় একটি ট্রাস্টে হস্তান্তর করেন যাতে স্বার্থসংঘাত না হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ব্যবসা থেকে আয় শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের হাতেই গিয়ে পৌঁছাবে, কারণ তিনি এখনো পারিবারিক ব্যবসার প্রধান।
তিনি বর্তমানে লাইসেন্সিং চুক্তি, ক্রিপ্টো প্রকল্প, গলফ ক্লাবসহ নানা মাধ্যমে আয় করছেন। এর আগে তিনি সোনালি জুতা ও ‘গড ব্লেস দ্য ইউএসএ বাইবেল’ নামের পণ্যও বাজারে এনেছিলেন।
যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেও গাজায় বর্বর হামলা চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। গাজায় ভয়াবহ হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২৪ জন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে খাবারের জন্য অপেক্ষমান ছিলেন। কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের পরিচালকের বাসভবন লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এতে ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডা. মারওয়ান সুলতান নিহত হয়েছেন। গাজায় নিজ বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিনি নিহত হয়েছেন। এ হামলায় তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যও প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহত ডা. মারওয়ান আল সুলতানকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দিয়েছে ইসরায়েল।
শরনার্থী শিবির ও ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ গাজাতেও। কথিত নিরাপদ ঘোষিত অঞ্চলে আইডিএফের হামলায় শিশুসহ মৃত্যু হয়েছে অন্তত পাঁচজনের। গাজার উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম চিকিৎসা কেন্দ্র আল-শিফা হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলেন, ইসরায়েলের অবরোধের মধ্যে হাসপাতালে জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় শত শত রোগী মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছেন।
এদিকে গাজার খান ইউনিসের কথিত ‘নিরাপদ এলাকা’ আল-মাওয়াসির একটি তাঁবুতে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত, আহত হয়েছেন আরও অনেকে- যাদের মধ্যে শিশুরাও ছিল।
জাতিসংঘের মতে, এখন গাজার ৮২ শতাংশ এলাকা হয় ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রণে, নয়তো জবরদস্তিমূলক উচ্ছেদের হুমকির মধ্যে রয়েছে। গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান এলাকায় বসবাসকারী ইসমাইল বলেন, নতুন করে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষ রাস্তায় তাঁবু খাটিয়ে বাস করছে। কোথাও জায়গা নেই।
এদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি আগ্রাসনে কমপক্ষে ৫৭ হাজার ১২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯২ জন।
এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দেয়, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এক ভয়াবহ মানবিক সংকটে রূপ নিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য অবকাঠামো ইতোমধ্যেই ধ্বংসপ্রাপ্ত এবং বহু পরিবার জীবনরক্ষাকারী সহায়তা ছাড়াই জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। অবরুদ্ধ গাজায় সহিংসতার প্রতিদিনের এ চিত্র বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিচ্ছে, কিন্তু সহিংসতা বন্ধের কার্যকর কূটনৈতিক পদক্ষেপ এখনো অধরাই।
ইসরায়েলের গণহত্যায় সাহায্য করা কোম্পানির নাম প্রকাশ
প্রতিদিন গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ২০২৩ সালের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পাখির মতো মানুষ মারছে তারা। সরকারি হিসেবে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় প্রায় ৬০ মানুষকে হত্যা করেছে। তবে প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা আরো বেশি। এবার ইসরায়েলের এই গণহত্যায় কারা সাহায্য করছে তা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
গাজায় গণহত্যা চালাতে কোন কোন আন্তর্জাতিক কোম্পানি ইসরায়েলিদের সহায়তা করছে, সেগুলোর তালিকা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সেসকা আলবানিজ। ফ্রান্সেসকা তার প্রতিবেদনে ৪৮টি করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করেছেন।
কোম্পানিগুলো শুধু এখন আর ফিলিস্তিনে দখলদারিত্বেই জড়িত না, এগুলো গাজার গণহত্যাতেও সহায়তা করছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ফ্রান্সেসকা বলেছেন, এসব কোম্পানি সহযোগিতা করছে বলেই ইসরায়েল এখনো গণহত্যা চালিয়ে যেতে পারছে। আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
যেসব কোম্পানিকে প্রতিবেদনে চিহ্নিত করা হয়েছে তা একনজরে দেখে নেওয়া যাক-
সামরিক খাত
সামরিক খাতে মার্কিন অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন এবং ইতালির লিওনার্দো এসপিএ-এর মতো কোম্পানিগুলো ইসরায়েলকে যুদ্ধবিমান এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে, যা গাজায় ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি খাত
প্রযুক্তি খাতে মাইক্রোসফট, গুগলের পেরেন্ট কোম্পানি অ্যালফাবেট, অ্যামাজন, এবং আইবিএমের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টরা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে নজরদারি এবং বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করছে। প্যালান্টির টেকনোলজিস ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-এআই ভিত্তিক লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে প্রযুক্তি সরবরাহ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি
নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি খাতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাটারপিলার, সুইডেনের ভলভো এবং দক্ষিণ কোরিয়ার হাইডি হুন্ডাই-এর মতো কোম্পানিগুলোর ভারী যন্ত্রপাতি ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর ধ্বংস এবং অবৈধ ইহুদি বসতি নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে।
পর্যটন ও আবাসন
পর্যটন ও আবাসন খাতে বুকিং ডট কম এবং এয়ারবিএনবি-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো দখলকৃত পশ্চিম তীরের অবৈধ বসতিতে হোটেল এবং সম্পত্তি তালিকাভুক্ত করে লাভবান হচ্ছে।
জ্বালানি ও সম্পদ
ড্রামন্ড কোম্পানি (যুক্তরাষ্ট্র) এবং গ্লেনকোর (সুইজারল্যান্ড) ইসরায়েলের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা সরবরাহ করছে।
বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান
বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান খাতে বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অ্যাসেট ম্যানেজার, ব্ল্যাকরক এবং ভ্যানগার্ড—অভিযুক্ত অনেক কোম্পানির প্রধান বিনিয়োগকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আইনের দায়বদ্ধতা জাতিসংঘের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, এ ধরনের কার্যকলাপের জন্য কোম্পানি এবং তাদের কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন। প্রতিবেদনটি গতকাল বৃহস্পতিবার জেনেভায় একটি সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।
’আধুনিক ইতিহাসের নিষ্ঠুর গণহত্যার জন্য ইসরায়েল দায়ী’
অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ বলেছেন, গাজায় ফিলিস্তিনিরা কল্পনার বাইরেও দুর্ভোগ সহ্য করে চলেছে। আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুর গণহত্যার জন্য ইসরায়েল দায়ী। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে ফিলিস্তিনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সর্বশেষ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আলবানিজ।
এ সময় তিনি বলেন, ‘অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের পরিস্থিতি ভয়াবহ। সরকারি পরিসংখ্যানে ২ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছেন। তবে শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেন, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি।’
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মার্কিন-ইসরায়েল পরিচালিত তথাকথিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’কে তিনি ‘একটি মৃত্যুফাঁদ - যা ক্ষুধার্ত, বোমাবর্ষণকারী, ক্ষীণকায় জনগোষ্ঠীকে হত্যা বা পালিয়ে যেতে বাধ্য করার জন্য তৈরি করা হয়েছে’ বলে নিন্দা করেন।’
জাপানের দক্ষিণাঞ্চলের একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপপুঞ্জে গেল দুই সপ্তাহে ৯ শতাধিক ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এখন সামনে কী ঘটতে যাচ্ছে, সেই আতঙ্কে সেখানকার নাগরিকদের ঘুম পর্যন্ত হারাম হয়ে গেছে। যদিও এসব ভূকম্পে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর আসেনি।
ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এমন খবর দিয়েছে। ভূমিকম্পের এই প্রবণতা কখন থামবে, তা বলতে পারছে না জাপানের আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বুধবার (৩ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির ভূমিকম্প ও সুনামি পর্যবেক্ষণ বিভাগের পরিচালক আয়াতাকা এবিতা বলেন, ‘গেল ২১ জুন থেকে তোকারা দ্বীপপুঞ্জের সমুদ্রে ভূকম্পনীয় তৎপরতা খুবই সক্রিয়।’
দক্ষিণাঞ্চলীয় কিয়ুশু দ্বীপে পাঁচ দশমিক পাঁচ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হওয়ার পরই তিনি এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। এই ভূকম্পবিশারদ বলেন, ‘আজ ৪টা পর্যন্ত ভূমিকম্পের সংখ্যা ৯ শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে।’
অঞ্চলটিতে আরও বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে শঙ্কায় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
জাপানি সংবাদমাধ্যম দ্য মেইনিচি শিম্পুন জানিয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত আগের ১০ দিনে অঞ্চলটিতে ৭৪০টি ভূমিকম্প নথিভুক্ত করা হয়েছে। সাত মাত্রার ভূমিকম্পের তীব্রতার স্কেলে এক বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ছিল এগুলো। জাপানে ভূমিকম্পের কাঁপুনির মাত্রা বোঝাতে এই স্কেল ব্যবহার করা হয়, যেখানে সাত হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী মাত্রা।
পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্প হলে মানুষকে সতর্ক করার জন্য সেটি যথেষ্ট বলে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এই মাত্রার ভূমিকম্পে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে পারে, টাল সামলাতে অবলম্বন হিসেবে কিছু একটা ধরে রাখতে বাধ্য হতে হয়।
নিজেদের ওয়েবসাইটে তোকারা গ্রাম জানিয়েছে, ভূমিকম্পের ভয়ে লোকজন ঘুমাতে না পেরে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন।
‘মনে হচ্ছে, গ্রামটি সবসময় কাঁপছে। যে কারণে ঘুমাতে গেলে আতঙ্ক তৈরি হয়,’ বললেন একজন বাসিন্দা। কখন এই ভূমিকম্প শেষ হবে, তা স্পষ্ট না বলে মন্তব্য করেন আরেক বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘সন্তানদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে কিনা; সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।’
সরকারি উপাত্ত থেকে জানা যায়, ২৩ জুন একদিনেই ১৮৩টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ২৬ জুন এই সংখ্যাটি ছিল ১৫; ২৭ জুন ১৬। কিন্তু পরেরদিন থেকে আবার বাড়তে থাকে ভূকম্পের সংখ্যা। ২৮ জুন ৩৪টি ভূমিকম্প হয়েছে, ২৯ জুন ৯৮টি। আর ৩০ জুন ৬২টি ভূমিকম্প হয়েছে।
এরআগে ২০২৩ সালে তোকারা অঞ্চলে একই ধরনের ভূকম্পনীয় প্রবণতা দেখা গেছে। তখন ৩৪৬টি ভূমিকম্প নথিভুক্ত করা হয়েছে।
বিচ্ছিন্ন তোকারা দ্বীপপুঞ্জের সাতটিতে মানুষ বাস করেন। এসব দ্বীপে সবমিলিয়ে ৭০০ বাসিন্দা রয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তোকারা দ্বীপপুঞ্জের আশপাশের অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক গঠন অস্বাভাবিক হওয়ায় সাগরতলের নিচে গিয়ে চাপ জমা পড়ে সহজভাবে, পরে তা ভূমিকম্পের আকারে বেরিয়ে আসে।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ভূকম্পনপ্রবণ দেশগুলোর একটি হচ্ছে জাপান।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় ‘রিং অফ ফায়ারের’ পশ্চিম প্রান্ত বরাবর চারটি বড় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত জাপান। সাড়ে ১২ কোটি জনসংখ্যার দেশটির বাসিন্দারা বছরে দেড় হাজারের বেশি ভূকম্পের মুখে পড়েন। যা বিশ্বের মোট ভূমিকম্পের আঠারো শতাংশ।
তবে এগুলোর বেশিরভাগই মৃদু হওয়ায় অবস্থান ও ভূমিকম্পের গভীরতার ওপর ভিত্তি করে ক্ষয়ক্ষতি ঘটে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সর্বশেষ মূল্যায়নে দেখা গেছে সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে পরিচালিত মার্কিন হামলার ফলে দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি এক থেকে দুই বছর পিছিয়ে গেছে বলে বুধবার (০২ জুলাই) পেন্টাগন জানিয়েছে।
ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল বুধবার (০২ জুলাই) সাংবাদিকদের বলেছেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই হামলার ফলে তাদের কর্মসূচি অন্তত এক থেকে দুই বছর পিছিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ধারণা করছি এটি দুই বছরের কাছাকাছি সময়ের জন্য তাদের কার্যক্রম থামিয়ে দিয়েছে।
ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জেরে জাতিসংঘের পরমাণু নজরদারি সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে ইরান। এই পদক্ষেপকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যায়িত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
তেহরান থেকে এএফপি জানায়, গত মাসে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে ১২ দিনের সংঘাতের পরই এই সিদ্ধান্ত এলো। ওই সংঘাতে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে নজিরবিহীন হামলা চালায়, যা তেহরান ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)’র মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে।
গত ২৫ জুন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার একদিন পরই ইরানি আইনপ্রণেতারা আইএইএ-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার পক্ষে বিপুল ভোটে রায় দেন। বুধবার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম নিশ্চিত করেছে যে, আইনটি এখন কার্যকর হয়েছে।
ইরানি গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, এই আইনের লক্ষ্য হলো পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি)-এর অধীনে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের নিজস্ব অধিকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন নিশ্চিত করা, বিশেষ করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ওপর জোর দেওয়া।
ওয়াশিংটন গত ১৩ জুন ইসরাইলের সামরিক পদক্ষেপের কারণে স্থগিত হওয়া আলোচনা পুনরায় শুরুর জন্য তেহরানকে চাপ দিচ্ছিল। তারা ইরানের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেছেন, ‘আমরা এটিকে অগ্রহণযোগ্য বলব। এমন এক সময়ে ইরান আইএইএ-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যখন তাদের সামনে শান্তির ও সমৃদ্ধির পথে ফেরার সুযোগ ছিল।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র এই সিদ্ধান্তকে ‘স্পষ্টতই উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন।
এদিকে, পেন্টাগন বুধবার জানিয়েছে যে মার্কিন গোয়েন্দা মূল্যায়নে দেখা গেছে, ইরানের পরমাণু স্থাপনায় চালানো হামলায় দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি এক থেকে দুই বছর পিছিয়ে গেছে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তাদের কর্মসূচিকে অন্তত এক থেকে দুই বছর পিছিয়ে দিয়েছি। প্রতিরক্ষা বিভাগের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা মূল্যায়নে এটিই দেখা গেছে।’
তিনি পরে যোগ করেন, ‘আমরা মনে করি সময়টা সম্ভবত দুই বছরের কাছাকাছি।’
আইএইএ পরিদর্শকদের ইরানের ঘোষিত পরমাণু স্থানগুলোতে প্রবেশাধিকার থাকলেও, এই স্থগিতাদেশের কারণে তাদের বর্তমান অবস্থা অনিশ্চিত।
রোববার, জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি বলেন, ‘পরিদর্শকদের কাজ স্থগিত করা হয়েছে, তবে তাদের বা আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসির বিরুদ্ধে কোনো হুমকির ঘটনা ঘটেনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘পরিদর্শকরা ইরানে আছেন এবং নিরাপদ আছেন। কিন্তু তাদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে এবং তারা আর আমাদের স্থাপনাগুলোতে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন না।’
নতুন আইনে স্থগিতাদেশের পর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
আইএসএনএ বার্তা সংস্থা আইনপ্রণেতা আলিরেজা সালিমিকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘এখন থেকে পরিদর্শকদের পারমাণবিক স্থাপনায় প্রবেশ করতে হলে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন লাগবে।’
অন্যদিকে, মেহর বার্তা সংস্থা আইনপ্রণেতা হামিদ রেজা হাজী বাবাইকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আইএইএ’র ক্যামেরা ব্যবহারের অনুমতিও বন্ধ করে দেওয়া হবে। যদিও এটি নতুন আইনের আওতায় আছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।’
সংসদে বিলটি পাস হওয়ার পর গার্ডিয়ান কাউন্সিল তা অনুমোদন করে এবং প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিতাদেশ কার্যকর করেন বলে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে।
জবাবে, ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির ইউরোপীয় স্বাক্ষরকারীদের প্রতি ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়া চালু করে ইরানের ওপর জাতিসংঘের সমস্ত নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করার আহ্বান জানান।
স্ন্যাপব্যাক, যা অক্টোবরে শেষ হওয়ার কথা, সেটি ছিল পরমাণু চুক্তির অংশ যা ট্রাম্প ২০১৮ সালে একতরফা ভাবে প্রত্যাহার করার পর ভেঙে পড়ে। ইরান এক বছর পর তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে শুরু করে।
ইরানি কর্মকর্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়া চালু হলে তারা এনপিটি থেকেও সরে যেতে পারে।
ইসরাইল পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও এনপিটি চুক্তির সদস্য নয়।
জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মার্টিন গিজ বলেন, আইএইএ-এর সঙ্গে ইরানের সহযোগিতা স্থগিত করার পদক্ষেপটি একটি ‘ভয়াবহ সংকেত’।
ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর থেকে তেহরান বারবার আইএইএ’র নীরবতার সমালোচনা করেছে।
১২ জুন জাতিসংঘে গৃহীত একটি প্রস্তাবনায় ইরানকে অসহযোগিতার জন্য অভিযুক্ত করা হয়। তেহরান বলছে, ওই প্রস্তাবই হামলার জন্য অজুহাত তৈরি করেছিল।
বুধবার ইরানের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আলী মোজাফফারি আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি’র বিরুদ্ধে ‘চক্রান্তমূলক ও বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন’ তৈরি করে ইসরাইলকে হামলার ‘পটভূমি তৈরি’ করে দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন।
ইরান জানিয়েছে, গ্রোসি বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থান পরিদর্শনের জন্য যেতে চাইলেও তেহরান তা প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ—তাদের মতে, তাতে ‘খারাপ উদ্দেশ্য’ রয়েছে।
ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি আইএইএ প্রধানের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের হুমকির নিন্দা জানিয়েছে।
সোমবার, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেন, সহযোগিতা বন্ধের ভোট জনসাধারণের ‘উদ্বেগ ও ক্ষোভের’ প্রতিফলন।
১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের বহু সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন। ইসরাইলের ওপর পালটা হামলায় ইরানও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে প্রতিক্রিয়া জানায়।
গত ২২ জুন, ইসরাইলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোরদো, ইসফাহান এবং নাতাঞ্জের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে নজিরবিহীন হামলা চালায়।
বিচার বিভাগ অনুসারে, এই সংঘাতে ইরানে ৯শ’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
ইসরাইলের সরকারি তথ্যমতে, ইরানের পালটা হামলায় দেশটিতে ২৮ জন নিহত হয়েছেন।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি স্বীকার করেছেন, ‘স্থাপনাগুলোতে গুরুতর ক্ষতি হয়েছে।’
তবে সিবিএস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বোমা মেরে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান ধ্বংস করা যায় না।’
ইতালির নাগরিক ও নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিও-বিডি’র কর্মকর্তা তাবেলা সিজারকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় তিন জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায়, বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এম এ কাইয়ুমসহ চার জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
আজ ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক শেখ ছামিদুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল, রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল আরেফিন ওরফে ভাগনে রাসেল। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাদের আরো এক বছরের কারাভোগ করতে হবে।
খালাস পাওয়া অপর তিন আসামি হলেন- কাইয়ুমের ভাই আবদুল মতিন, সোহেল ও শাখাওয়াত হোসেন।
আদালতের পেশকার গোলাম নবী বাসস’কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশান ৯০ নম্বর সড়কের পশ্চিম প্রান্তে গুলশান অ্যাভিনিউ সংলগ্ন গভর্নর হাউজের দক্ষিণের দেওয়াল ঘেঁষা ফুটপাতে দুর্বৃত্তরা তাবেলা সিজারকে গুলি করে।
ওই সময় স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
ওই হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইসিসিও কো-অপারেশনের বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি হেলেন দার বিক বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করা হয়।
২০১৬ সালের ২৮ জুন ঢাকার আদালতে বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এম এ কাইয়ুমসহ সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী।
মামলায় বিচার চলাকালে ৭০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪২ আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন।
মন্তব্য